হজরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি – পার্ট-১

ইসলামের ইতিহাসে এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাঁদের জীবন, জ্ঞান ও চরিত্রের দীপ্তি কালের পরিক্রমায় অম্লান রয়ে গেছে। তাফসির, হাদিস,

Table of Contents

ইসলামের ইতিহাসে এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাঁদের জীবন, জ্ঞান ও চরিত্রের দীপ্তি কালের পরিক্রমায় অম্লান রয়ে গেছে। তাফসির, হাদিস, জুহদ ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে হজরত হাসান বসরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হলেন এক অনন্য নাম। তিনি তাবেয়িদের মধ্যেও ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠদের একজন। জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি ও আখলাকের এমন অনুপম সংমিশ্রণ তাঁর মধ্যে বিরাজমান ছিল, যা তাঁকে যুগে যুগে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে অমর করে রেখেছে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়:
হজরত হাসান বসরি (রহ.) ২১ হিজরিতে (৬৪২ খ্রিষ্টাব্দ) হজরত উমর ফারুক রাদিআল্লাহু আনহুর খিলাফতের বরকতময় যুগে মদিনাতুল মুনাওয়ারায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল আবু সাঈদ আল-হাসান ইবনে আবী হাসান আল-বসরী। তাঁর পিতার নাম ছিল ইয়াসির। পিতার শিকড় ইয়েমেনে, তিনি ছিলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পালকপুত্র প্রখ্যাত সাহাবি হজরত যায়িদ ইবনে সাবিত রাদ্বিআল্লাহু আনহুর মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস। আর মা উম্মে আম্মারাহ ছিলেন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা রাদিআল্লাহু আনহা—এঁর সেবিকা।

শৈশব:
হজরত হাসান আল-বসরী (রহ.)-এঁর শৈশব কেটেছে নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘরের বরকতময় পরিবেশে। ভাগ্যক্রমে উম্মে সালমা রাদ্বিআল্লাহু আনহা হয়ে উঠেন তাঁর অভিভাবিকা, যার ছায়ায় ও সাহাবায়ে কিরামের সান্নিধ্যে তিনি বড় হতে থাকেন। তাঁর মা খায়রাহ (রহ.) ছিলেন উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.)-এঁর খেদমতগার। ব্যস্ততার সময় উম্মে সালমা (রা.) ছোট্ট হাসানকে বুকে নিতেন এবং আল্লাহর কুদরতে তাঁর স্তন থেকে দুধ প্রবাহিত হতো, যা হাসান পান করতেন। অনেকে মনে করতেন, তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের দীপ্তি সেই নববী গৃহের বরকতেরই ফল।

শৈশবে মা তাঁকে সাহাবায়ে কেরামের কাছে নিয়ে যেতেন দোয়ার জন্য। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন— “হে আল্লাহ, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দিন এবং মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলুন।”
(আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খণ্ড ৯, পৃ. ২৭৮)

হজরত হাসান বসরী (রহ.) নিজেই এক স্মৃতিচারণে বলেন, “আমি উসমান ইবনু আফফান (রা.)-এঁর খিলাফতের যুগে নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) স্ত্রীদের ঘরে প্রবেশ করতাম, এবং আমার হাত দিয়ে সহজেই ঘরের ছাদ স্পর্শ করতে পারতাম।”
(আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ৮৫)

এভাবেই, নববী ঘরের আধ্যাত্মিক সুবাস, সাহাবায়ে কেরামের দোয়া এবং শৈশবের প্রতিটি মুহূর্তের বরকত তাঁর অন্তরে এমন এক আলো প্রজ্বলিত করেছিল, যা সারা জীবন দীপ্তি ছড়িয়ে গেছে।

সাহাবিদের সোহবত:
হজরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রায় ১৩০ জন সাহাবির সাহচর্য লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে হজরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু, হজরত উসমান রাদিআল্লাহু আনহু, হজরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু,এবং হজরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুর মতো বরেণ্য সাহাবিগণ ছিলেন।
(ইবনু হাজার আসকালানী, তাহজীবুত তাহজীব, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৫০)

তিনি হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এঁর সাথে জুমার নামাজে অংশ নিয়েছিলেন এবং তাঁর খুতবা শুনেছিলেন। তিনি ‘দার’ দিবসের সাক্ষী ছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। (ইবনে সা’দের আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১১৫)

শারীরিক গঠন ও গুণাবলি:
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হজরত হাসান আল বসরী ছিলেন একজন জামে (সর্ববিদ), বিদ্বান, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, ফকিহ, বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য, আবেদ, পরহেজগার, বিশাল জ্ঞানের অধিকারী, সাবলীল বক্তা এবং সুদর্শন পুরুষ।”
(ইবনে সা’দের আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১১৫)

উম্মুল হাকাম বলেন, “হজরত হাসান আল বসরী হিত্তান আল-রাকাশির কাছে আসতেন, আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর চেহারার কোনো যুবক দেখিনি।”
(যাহাবীর সিয়ারু আ’লামিল নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৭৩)

আমির আল-শাবী এক ব্যক্তিকে বসরায় যাওয়ার সময় বলেছিলেন, “যখন তুমি বসরায় সবচেয়ে সুদর্শন ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে দেখবে, তিনিই হাসান। তাঁকে আমার সালাম পৌঁছে দিও।”
(ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খণ্ড ৯, পৃ. ২৭৮)

হযরত হাসান আল-বসরীর শিক্ষকগণ:
হজরত হাসান আল-বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি অসংখ্য মহান সাহাবি ও তাবেয়িনের কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর প্রধান শিক্ষকগণের মধ্যে আছেন, হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন, মুগিরাহ ইবনে শু’বাহ, আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ, সামুরাহ ইবনে জুন্দুব, আবু বাকরাহ আল-সাকাফী, নু’মান ইবনে বশীর, জাবির, জুন্দুব আল-বাজালী, ইবনে আব্বাস, আমর ইবনে তাগলিব, মা’কিল ইবনে ইয়াসার, আসওয়াদ ইবনে সারি’, আনাস (রাদ্বিআল্লাহু আনহুম) এবং আরও অসংখ্য সাহাবি।
বিশেষ করে তিনি হিত্তান ইবনে আব্দুল্লাহ আল-রাকাশীর কাছে কুরআন পাঠ গ্রহণ করেছিলেন।
(সিয়ারু আ’লামিল নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৬৫)

হজরত হাসান আল-বসরীর ছাত্রগণ:
হজরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহির কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করেছেন বহু প্রখ্যাত আলেম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: আইয়ুব আল-সাখতিয়ানি, শায়বান আল-নাহবী, ইউনুস ইবনে উবাইদ, ইবনে আউন, হামিদ আল-তাওয়ীল, সাবিত আল-বুনানী, মালিক ইবনে দীনার, হিশাম ইবনে হাসসান, জারীর ইবনে হাযিম, রবি’ ইবনে সাবিহ, ইয়াযিদ ইবনে ইবরাহিম আল-তুসতারী, মুবারক ইবনে ফাদালাহ, আবান ইবনে ইয়াযিদ আল-আত্তার, ক্বুরাহ ইবনে খালিদ, হাযম আল-ক্বাতঈ, সাল্লাম ইবনে মিসকীন, শুমায়ত ইবনে আজলান, সালিহ আবু আমির আল-খায্যায সহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি।
(সিয়ারু আ’লামিল নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৬৬)

হাসান আল-বসরীর তাফসির ও হাদিস বর্ণনা:
হজরত হাসান আল-বসরী ছিলেন তাফসির ও হাদিসের ক্ষেত্রে একজন স্বীকৃত এবং প্রাজ্ঞ মনীষী। কুরআনের গভীর অর্থ ও তাত্ত্বিক ভাবনা তাঁর হৃদয়ে ফুটে উঠত। তিনি অসংখ্য হাদিস সংরক্ষণ করেছেন, যার মাধ্যমে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুনান এবং জীবনচর্চা পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরিত হয়েছে।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণ, যেমন ইমাম বুখারি (রহ.) ও ইমাম মুসলিম (রহ.)-ও তাঁর কাছ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রায় ১৪০০ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি সরাসরি বহু সাহাবায়ে কিরাম থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন।
বিশেষভাবে, তিনি হজরত আলী ইবনে আবি তালিব রাদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ও ইমাম সুয়ুতি (রহ.) এঁর দলিল ও মন্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। হজরত আব্দুর রাজ্জাক (রহ.) বর্ণনা করেন, “একবার হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু আনহু একটি বিচারকার্যে আল-হাসান বসরীর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন।”
(মুসান্নাফ, খণ্ড ৭, পৃ. ৪১২)

হজরত হাসান আল-বসরীর ইলমি মর্যাদা:
ইবনে সা’দ বর্ণনা করেন, যখন আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে কোনো মাসআলা জিজ্ঞেস করা হতো, তিনি বলতেন, “আমাদের মাওলা হাসানের কাছে যাও এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করো। কারণ তিনি শুনেছেন এবং স্মরণ রেখেছেন, আর আমরা ভুলে গিয়েছি।”
(আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১৩০)

আবু ক্বাতাদাহ (রা.) বলেন, “আমি আল-হাসানের মতামতের সঙ্গে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এঁর মতামত যতটা সাদৃশ্যপূর্ণ পেয়েছি তেমন আর কাউকে দেখিনি।”
(ইবনে সা’দের আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১১৮)

আল-রাবী ইবনে আনাস বলেন, “আমি দশ বছর বা তারও বেশি সময় হযরত হাসান বসরীর কাছে যাতায়াত করেছি, এমন কোনো দিন ছিল না যখন নতুন কিছু শুনিনি।”
(সিয়ারু আ’লামিল নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৭৪)

ইবনে সা’দ (রহিমাহুল্লাহ) আল-হাসানকে জামে (সর্ববিদ), বিদ্বান, ফকিহ, বিশ্বস্ত, পরহেজগার, সাবলীল বক্তা ও সুদর্শন পুরুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদিসগুলি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী ছিল। মক্কায় গেলে তাঁকে উঁচু আসনে বসানো হতো এবং সেখানে মুজাহিদ, আতা, তাউস ও আমর ইবনে শু’আইবসহ অনেকে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে শ্রবণ করতেন।
(ইবনে সা’দের আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১১৫)

ইবাদত ও রিয়াজত:
পরিণত বয়সে তিনি রসুলুল্লাহর সুন্নাতের কঠোর অনুসারী ছিলেন। এছাড়া প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও সাধনার ক্ষেত্রে তিনি সে যুগে খ্যাতিমান ব্যক্তি হিসেবে সবার নিকট সুপরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি অবশ্য সুফিদের মধ্যে অগ্রগামী ছিলেন। সারা জীবন একটিমাত্র পশমি জুব্বা পরে কাটিয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে একবার প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিআল্লাহু আনহু মন্তব্য করেন, “আমি হাসান ও ইবনে সীরীন এই দু’ব্যক্তির কারণে বসরাবাসীদের প্রতি ঈর্ষা করি!”
(আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৯ম খন্ড)

সারী ইবনে ইয়াহইয়া বলেন, “হজরত হাসান বছরের আইয়ামে বীজ (১৩, ১৪, ১৫), হারাম মাস এবং সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন।”
(আহমদ ইবনে হাম্বলের আয-যুহদ, পৃ. ২১৭)

আল-ফাসাবী ইবনে শাওজাবের সূত্রে বর্ণনা করেন, “আল-হাসান আল-বসরী ছিলেন রাতের সঙ্গী।” অর্থাৎ তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ বেশি আদায় করতেন। (আল-মা’রিফাহ ওয়াত-তারিখ, খণ্ড ২, পৃ. ৪৩)

আলকামা ইবনে মারসাদ বলেন, “জুহদ অর্জনকারী আটজন তাবেয়িনের মধ্যে আল-হাসান ইবনে আবিল হাসানও একজন। আমরা তাঁর চেয়ে বেশি দুঃখী অন্য কাউকে দেখিনি, যেন তিনি সবেমাত্র কোনো বড় বিপদ থেকে উঠেছেন।”
(হিলয়াতুল আওলিয়া, খণ্ড ২, পৃ. ১৩৪)

জিহাদে অংশগ্রহণ:
হজরত হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কেবল আলেম ও সুফি নন, তিনি ছিলেন সময়ের এক বীর যোদ্ধা, যিনি জিহাদের মাঠে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও সাহসিকতার গল্পগুলো আজও ইতিহাসে এক আলোকস্তম্ভের মতো জ্বলজ্বল করে। আবু উবায়দা আল-মু’মিন বলেন, “আমি এক ব্যক্তিকে হজরত হাসান বসরীকে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি, ‘হে আবু সাঈদ, আপনি কি কখনো কোনো যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি কাবুল যুদ্ধে আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ (রা.)-এঁর সাথে অংশ নিয়েছিলাম’।”
(ইবনে সা’দের আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১২৯)

হিশাম ইবনে হাসসান বলেন, “হজরত হাসান বসরী তাঁর সময়ের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি ছিলেন।”
(সিয়ারু আ’লামিল নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৭৮)

জাফর ইবনে সুলায়মান বলেন, “যখন যুদ্ধ উপস্থিত হতো, তখন হজরত হাসান বসরী ছিলেন সবচেয়ে কঠিন হৃদয়ের মানুষ। তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে ধার্মিক, সবচেয়ে উদার এবং সবচেয়ে সাবলীল বক্তা।
মুহাল্লাব ইবনে আবি সুফরাহ যখন মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন, তখন আল-হাসান অশ্বারোহী বাহিনীর অগ্রভাগে থাকতেন।”
(আল-মা’রিফাহ ওয়াত-তারিখ, খণ্ড ২, পৃ. ৪৯)

এই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়, যুদ্ধের ময়দানে তাঁর উপস্থিতি ছিলো ত্রাস ও অনুপ্রেরণার মিশ্রণ। কঠোর হৃদয় তাঁর শত্রুদের জন্য ছিল শঙ্কার কারণ, আর তাঁর কথা ও আচরণ তাঁর সতীর্থদের জন্য ছিলো অনুপ্রেরণার স্রোত।

বিচারকের দায়িত্ব পালন:
হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজের খিলাফতের সময় বসরার বিচারব্যবস্থায় দায়িত্বগ্রহণ করেছিলেন হজরত হাসান আল-বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)। কঠোর ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠা ও সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে তিনি দায়িত্ব পালনে ছিলেন এক অনন্য মিসাল।
(আল-মা’রিফাহ ওয়াত-তারিখ, খণ্ড ২, পৃ. ৪৯)
আবু হাররাহ আল-রাকাশী আরো জানান, হজরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য কখনোই পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না, তার জন্য তিনি কখনো অর্থের লোভে পতিত হননি।
(ইবনে সা’দের আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১২৫)

খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজকে হাসান বসরীর উপদেশ:
যখন হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন হাসান আল-বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে একটি গুরুত্ববহ চিঠি লিখেছিলেন। নিজ থেকে শুরু করে তিনি লিখেছিলেন, “অতঃপর, দুনিয়া হলো এক ভয়ংকর আবাস, যেখানে আদম (আ.)-কে জান্নাত থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছিল। জানুন, এই পৃথিবীর পতন সাধারণ কোনো পতনের মতো নয়। যে কেউ এখানে নিজেকে সম্মানিত ভাববে, তাকে অপমানই ভোগ করতে হয়। প্রতিটি মুহূর্তে এখানে কেউ না কেউ শিকার হয়। হে আমীরুল মুমিনিন, আপনি যেন এই দুনিয়ার ক্ষত নিরাময়ের মতো হয়ে উঠেন; যিনি দীর্ঘকালীন রোগ থেকে মুক্তির জন্য তিক্ত ওষুধ গ্রহণ করেন। তিক্ততা সহ্য করাই মুক্তির পথ। সালাম।”
(আবু নু’আইম, হিলিয়াতুল আওলিয়া, খণ্ড ২, পৃ. ১৪৮)

হাসান বসরীর নবীপ্রেম:
ইমাম আহমদ হজরত হাসান আল-বসরীর সূত্রে আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, “রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন জুমার দিন খুতবা দিতেন, তখন একটি কাঠের টুকরোর ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। যখন মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেল, তিনি বললেন, ‘আমার জন্য একটি মিম্বার তৈরি করো।’ তিনি চেয়েছিলেন মানুষ তাঁকে যেন শুনতে পায়। তাই তারা দুটি ধাপবিশিষ্ট একটি মিম্বার তৈরি করলো। তিনি কাঠের টুকরো থেকে মিম্বারে চলে গেলেন। আনাস ইবনে মালিক আমাকে বলেছেন যে তিনি শুনতে পেয়েছিলেন সেই কাঠের টুকরোটি সদ্য মাতৃহীন উটের বাচ্চার মতো কাঁদছিল। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বার থেকে নেমে সেটিকে জড়িয়ে ধরা পর্যন্ত সেটি কাঁদতে থাকে, তারপর শান্ত হয়ে যায়।”(মুসনাদে আহমদ, খণ্ড ২১, পৃ. ৭১, হাদিস: ১৩৩৬৩)

ইমাম যাহাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, “হজরত হাসান আল-বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন এই হাদিসটি বর্ণনা করতেন, তখন তিনি কাঁদতেন এবং বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, কাঠের টুকরো রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এঁর জন্য এমনভাবে কাঁদে, আর তোমাদের তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য আরও বেশি ব্যাকুল হওয়া উচিত।”
(সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৭০)

হযরত হাসান বসরীর উন্নত চরিত্র:
জারীর ইবনে হাযিম বলেন, “আমরা হজরত হাসান আল-বসরীর সঙ্গে অবস্থান করছিলাম, তখন দুপুরের সময় পার হয়ে গিয়েছিল। তাঁর ছেলে বলল, ‘শায়খকে একটু বিশ্রাম দিন, আপনারা তাঁকে কষ্ট দিচ্ছেন, এখনো তিনি কিছু খাননি বা পান করেননি।’ হজরত হাসান বসরী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘চুপ করো, তাদের থাকতে দাও। আল্লাহর কসম, তাদের দেখা আমার চোখের সবচেয়ে আনন্দদায়ক বিষয়। একজন মুসলমান যখন তার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে ও প্রশংসা করে, যতক্ষণ না তাদের দুপুরের বিশ্রাম চলে যায়।”
(ইবনে সা’দের আল-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১২৫)

উবাইস আবু উবাইদা বর্ণনা করেন, “হজরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন কোনো জিনিস কিনতেন এবং দাম ভগ্নাংশ সহ হতো, তিনি তা পূর্ণ করে দিতেন।”
তিনি আরও বলেন, “একদল লোক দর কষাকষি করছিল—একজন বলছিল এক দানি কম, আরেকজন বলছিল এক দানি বেশি। হযরত হাসান বসরী বললেন, ‘এটা কী? ভদ্রতা ছাড়া কোনো দ্বীন নেই।’”
(আল-মুনতাকা মিন কিতাবি মাকারিমিল আখলাক, পৃ. ১৩৩)

ফাদালাহ ইবনে দীনার বর্ণনা করেন, “আমি আমি হজরত হাসান বসরীর খচ্চর বিক্রির সময় উপস্থিত ছিলাম। ক্রেতা তাঁকে বললেন, ‘হে আবু সাঈদ, আমার জন্য কিছু ছাড় দিন।’ তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য পঞ্চাশ দিরহাম ছাড়। আরও বাড়াবো?’ ক্রেতা বললেন, ‘না, এতেই সন্তুষ্ট, আল্লাহ আপনার ব্যবসায় বরকত দিন।’”
(আল-মুনতাকা মিন কিতাবি মাকারিমিল আখলাক, পৃ. ১৩৪)

ইউনুস ইবনে উবাইদ বলেন, “হজরত হাসান বসরী তাঁর ভাতা গ্রহণ করে তা ভাগ করতে শুরু করলেন। যখন তাঁর পরিবার প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়ে দিলো, তিনি বললেন, ‘বাকিটুকু তোমাদের জন্য, এতে কোনো কল্যাণ নেই, যদি না তা এই কাজে ব্যয় করা হয়।”
(আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ৭, পৃ. ১২৫)

তরিকত ও তাসাউফ চর্চায় হাসান আল-বসরী (রহ.):
হজরত আবু যুরআহ (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত হাসান বসরী (রহ.) মাত্র ১৪ বছর বয়সে হজরত আলী রাদ্বিআল্লাহু আনহুর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কুফা ও বসরাতে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে তাসাউফ ও তরিকতের বাণী ছড়িয়ে দেন। সালফে সালিহীন মহাত্মারা তাঁকে ‘আবদাল’ অর্থাৎ আধ্যাত্মিক উচ্চ মর্যাদার ওলি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

একটি হাদিসে হজরত আনাস ইবনে মালিক (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পৃথিবীতে চল্লিশ জন থাকবে, যারা খলীলুল্লাহ ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর মত; তাদের মাধ্যমে মানুষ রহমত ও সাহায্য পাবে। কেউ মারা গেলে আল্লাহ তাঁর বদলে অন্য কাউকে নিযুক্ত করবেন।”
হজরত আবু কাতাদা (রাদ্বিআল্লাহু আনহু) বলেছিলেন, “আমরা নিশ্চিত যে, হজরত হাসান বসরী (রহ.) সেই আবদালদের একজন।”
(তাবারানী,আল-মু‘জামুল কাবীর)

প্রসিদ্ধ অলিআল্লাহদের জীবনীগ্রন্থ ‘হিলয়াতুল আওলিয়া’র প্রণেতা আবু নুআইম ইসফাহানী (রহ.) উল্লেখ করেছেন, হজরত হাসান বসরীর শাগরিদ হজরত ওয়াহিদ ইবনে জায়িদ (রহ.) আবাদান শহরে সুফিদের ‘খানকাহ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বসরা ও আশপাশের অঞ্চলে হজরত হাসান বসরীর তরিকত ও মুরিদানের খ্যাতি ব্যাপক ছড়িয়েছিল। এজন্যই ইবনে তাইমিয়্যা ‘আস-সুফিয়্যা ওয়াল ফুক্বারা’ গ্রন্থে বলেছেন, “তাসাওউফের প্রকৃত কেন্দ্র বসরা ছিল।”

হজরত হাসান বসরী (রহ.) আল্লাহর নামে শপথ করে বলতেন, “সত্যিকার ঈমানদাররা এই দুনিয়ায় দুঃখ-দুর্দশা ছাড়া আর কিছু অনুভব করেন না। আমরা এখন লবণ হারিয়েছি; ভালো কিছু বাকি নেই।” এক হাদিসে রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “আমার সাহাবারা লবণের মতো, যাদের ছাড়া খাদ্য কখনই সুস্বাদু নয়।” আল-হাসান বসরী এই হাদিসের আলোকে বলেছিলেন, আমরা হাসছি, কিন্তু কে জানে, আল্লাহ আমাদের আমল গ্রহণ করবেন কি না।
তিনি আরো বলেন, “আমি ৭০ জন বদরী সাহাবার সাক্ষাৎ পেয়েছি, যারা পশমি কাপড় পরতেন। যদি তুমি তাদের দেখো, বলবে তারা পাগল। আর যদি তারা তোমাদের মধ্যে সেরা ব্যক্তিকে দেখত, বলত, ‘তাঁদের জন্য আখিরাতের কোনো অংশ নেই। তিনি বহু মহাত্মার সাক্ষাৎ পেয়ে বলেন, “কিছু ব্যক্তি এতই দীনদার যে, পৃথিবীর মূল্য তাদের চরণধূলির চেয়েও কম। আমি দেখেছি, যারা নিজের অল্প খাবারের কিছু অংশ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করতেন।”
(হিলায়াতুল আওলিয়া, ২:১৩৪)

হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির কারামত
১. পবিত্র হজযাত্রায় একদল জ্ঞানী-গুণী মানুষ তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। রাস্তার উপর একটি কূপ থেকে পানি উত্তোলন করতে গিয়ে দেখা গেল পানির স্তর কূপের তলায়। আশেপাশে কোনো দড়ি কিংবা বালতিও চোখে পড়লো না। তাঁরা নিরাশ হয়ে ফিরে এসে হজরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে বিষয়টি অবগত করলেন। তিনি বললেন, আমি যখন নামাজে দাঁড়াবো তখন তোমরা সেই কূপের নিকট যাবে। তিনি কিছুক্ষণ পর নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন। নির্দেশ মুতাবিক তারাও কূপের নিকট গেলেন। কী আশ্চর্য, সবাই লক্ষ্য করলেন, কূপটি এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ! সুতরাং সবাই ইচ্ছেমতো পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করলেন। একজন কিছু পানি তুলে একটি পাত্রে জমা রাখলেন পরে পান করবেন এই বাসনা নিয়ে। কিন্তু দেখা গেলো পানির স্তর আবার নেমে নিচে চলে গেছে। ঠিক আগের মতো। হজরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করো না, তাই এমনটি হয়েছে।
(ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল বারী, আউলিয়ায়ে চিশত ১৮৫ পৃ,)

২. কাফেলা পবিত্র বাইতুল্লাহর পথে চলছে। হজরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি রাস্তা থেকে কিছু খেজুর সংগ্রহ করে অন্যান্য সদস্যদের খেতে দিলেন। তাঁরা তা খেয়ে অবাক দৃষ্টিতে বিচিগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলেন। এগুলো দেখতে যে ঠিক স্বর্ণের মতো লাগে! ঠিক তা-ই ছিলো। মক্কা শরিফ পৌঁছে স্বর্ণকারের দোকানে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখলেন, এগুলো সত্যিই খাঁটি স্বর্ণে পরিণত হয়ে গেছে।
(ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল বারী, আউলিয়ায়ে চিশত ১৮৬ পৃ,)

৩. কবরবাসীদের পক্ষ থেকে সালামের জবাব:
হযরত হাসান বসরী (রহ.) যখন কবরস্থানে সালাম দিতেন, তখন একবার কবর থেকে তাঁর কাছে প্রত্যুত্তর আসার ঘটনা ঘটে—
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, হে আবু সাঈদ!”
(ইবনু জাওযী, সিফাতুস-সফওয়া, খণ্ড ৩, পৃ. ১০৭; যাহাবী, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খণ্ড ৪, পৃ. ৫৮৫)

৪. জান্নাতি সুবাসের অনুভূতি:
এক ব্যক্তি তাঁর পাশে নামাজ আদায় করার পর বলেন—
“আমি এই ব্যক্তির দেহ থেকে জান্নাতের সুবাস পাচ্ছি।”
(ইবনু জাওযী, সিফাতুস-সফওয়া, খণ্ড ৩, পৃ. ১০৮;)

৫. দু’আ কবুল হওয়ার কারামত:
একবার বসরা অঞ্চলে চরম খরা দেখা দেয়। মানুষ হজরত হাসান বসরী (রহ.)-এঁর নিকট গিয়ে দোয়া করতে বললে তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। তখনই আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়। (ইবনু জাওযী, সিফাতুস-সফওয়া, খণ্ড ৩, পৃ. ১০৬;)

৬. শয়তান তাঁকে ভয় পেতো:
বর্ণিত আছে, শয়তান যখন তাঁকে দেখত, তখন ভয় পেয়ে সরে যেত এবং বলত—
“আমি হাসান বসরীকে সিংহের মতো ভয় করি।” (ইবনু কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ৯, পৃ. ৩১৭)

এগুলো এমন কারামত যা থেকে বোঝা যায়, হজরত হাসান বসরী (রহ.) আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা ছিলেন। তাঁর তাকওয়া, ইলম, ও রুহানিয়তের ফলে আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে অনেক অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ করেছেন।

কয়েকটি শিক্ষণীয় ঘটনা:
১. একদা হজরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর এক নিন্দুকের বাড়িতে বেশ কিছু খেজুর তুহফাস্বরূপ নিয়ে উপস্থিত হলেন। বললেন, দেখুন জনাব, আমি শুনেছি আপনি আপনার আমলনামা থেকে অনেক নেকি আমারটিতে স্থানান্তরিত করছেন। সুতরাং এই কাজের বিনিময় হিসাবে কিছু নিয়ে এসেছি পুরস্কার হিসাবে!

২. এক মাতাল মধ্যপানের নেশায় টলতে টলতে রাস্তা অতিক্রম করছিলো।
হজরত হাসান বসরী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে বললেন, আরে মিয়া, সাবধানে পা ফেলো, নইলে আছাড় খাবে! সে জবাব দিলো, আমি আছাড় খেলে কী-ই বা হবে, কারো কোনো ক্ষতি হবে না! কিন্তু আপনি সঠিকভাবে চলবেন, আপনার মতো এতো বড়ো সাধকের চলার পথে বেশকম হলে অসংখ্য মানুষের ক্ষতি হবে। কারণ, তারা তো আপনাকে অনুসরণ করে।

৩. মোমবাতি হাতে নিয়ে চলছে এক বালক। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ আলো কোথা থেকে আনলে? সে এক ফুঁৎকারে বাতিটি নিভিয়ে দিয়ে বলল, আগে বলুন এখন এটা কোথায় গেল? এরপর বলব, তা কোথায় থেকে এনেছি!
(ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল বারী, আউলিয়ায়ে চিশত ১৮৬ পৃ,)

হজরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে সালাফদের মন্তব্য:
১. ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.) এর উক্তি:
“আমি হাসান বসরীর মতো কাউকে দেখিনি, যার কথা ও কাজের মধ্যে এতটা মিল ছিল।”
(সিয়ারু আ’লামুন্নুবালা ,খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৫,)
২. ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.) এর উক্তি:
“হাসান বসরী তাবেঈদের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিলেন। তিনি যখন কোনো ভালো কাজের আদেশ করতেন, তখন নিজেই সে কাজে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী হতেন। আর যখন কিছু নিষেধ করতেন, তখন তিনিই সবচেয়ে বেশি তা থেকে দূরে থাকতেন।”
(সিয়ারু আ’লামুন্নুবালা, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৫)
৩. ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (রহ.) এর উক্তি:
“তিনি ছিলেন জুহদের এক মহান নেতা, উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, জ্ঞানের দরজার ফকীহ, আলেম, বিশ্বস্ত, ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী এবং সর্বজনস্বীকৃত ইমাম।”
(সিয়ারু আ’লামুন্নুবালা ,খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৮৩)
৪. ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) এর উক্তি:
“তিনি ছিলেন বসরার ফকিহদের নেতা, সবচেয়ে বড়ো ইবাদতকারী ও দুনিয়াবিমুখ।”
(আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ,খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৬০)
৫. ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) এর উক্তি:
“হাসান বসরী ছিলেন তাবেঈদের নেতা। তিনি ইলম, আমল, জুহদ ও পরহেজগারিতার সংমিশ্রণ ছিলেন।” (আস-সিকাত , খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৭৭)
৬. ইবনে জাওযী (রহ.) এর উক্তি:
“তিনি যখন কথা বলতেন, মনে হতো তিনি যেন আখিরাতকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন।” (সিফাতুস সফওয়া ,খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৭)
৭. ইমাম আব্দুল ওহহাব শা’রানী (রহ.) এর উক্তি:
“হাসান বসরীর কথা হৃদয়ের বন্ধ দরজা খুলে দিত, শুষ্ক চোখে অশ্রু ঝরাত এবং মৃত হৃদয়কে জীবিত করত।” (আত-তাবাকাতুল কুবরা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৯)

Explore Our Beloved Sufis

Persian

শাহানশাহ হজরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন..

Persian

হজরত সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী (১৮৬৫-১৯৩৭ খ্রি.), যিনি..

Persian

গাউসুল আজম হজরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.)..

Persian

তাসাউফকে এককথায় ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন। হজরত দাতা..

Persian

আল-হাসান আল-বসরীর উক্তিসমূহ: ১. “এই দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে..

Persian

ইসলামের ইতিহাসে এমন কিছু মহান ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যাঁদের..

All Rights © SufiGraphy | Web Crafted by Sufi Media Solution (SMS).